অন্যান্য কলকাতা প্রচ্ছদ 

বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত দুর্ভাগ্যজনক! রাজনীতির মঞ্চে কতটা সাফল্য পাবেন!

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম : বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গতকাল রবিবার তিনি এই সিদ্ধান্তের কথা কলকাতার জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল এবিপি আনন্দকে জানিয়েছেন। এরপরেই বাংলা জুড়ে শুরু হয়েছে আলোচনা সমালোচনা। আর এবিপি আনন্দ গতকাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত মনে হচ্ছে মঙ্গলবার পর্যন্ত আরো মানে হচ্ছে এবারের লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের পদত্যাগ নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাবে। কিন্তু তাতে কি খুব বেশি ফলপ্রসু হবে? গতকালই বাংলার এই জনপ্রিয় বিচারপতি জানিয়েছেন যে তিনি রাজনীতির ময়দানে আসতে চাইছেন। কারন তাকে কতগুলো রাজনীতিবিদ কটাক্ষ করেছেন রাজনীতির ময়দানে আসার জন্য চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন সেই চ্যালেঞ্জ তিনি গ্রহণ করছেন।

আমাদের কাছে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় লেগেছে জনবিচ্ছিন্ন হীন কোন নেতা যদি এই জনপ্রিয় বিচারপতিকে চ্যালেঞ্জ করেন আর তিনি তার জন্য বিচারপতির পদ ছেড়ে বেরিয়ে আসেন সেটা দুর্ভাগ্যজনক ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। আমাদের মনে আছে ইতিহাস বলছে যে, কাজী নজরুল ইসলাম যখন হুগলি জেলে বসে অনশন করছিলেন ঠিক সেই সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে টেলিগ্রাম করে বলেছিলেন যে তুমি অনশন ভঙ্গ করো বাংলা সাহিত্য তোমার কাছে অনেক কিছু প্রত্যাশা করে। গিভ আপ hanger strike আওয়ার লিটারেচার ক্লেইম ইউ। রবীন্দ্রনাথের বার্তার সঙ্গেই তাল মিলিয়ে বলতে ইচ্ছা করে অভিজিৎ বাবু আপনি বিচারপতির পদ থেকে এখনই পদত্যাগ করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাতে আর যাই হোক এই রাজ্যের সাধারণ নাগরিক ন্যায় এবং ইনসাফ থেকে বঞ্চিত হবেন। কারণ বিগত কয়েক বছর ধরে কলকাতা হাইকোর্টের প্রাঙ্গন এমন একজন মানুষ ছিলেন যার কাছে গেলে কোন মানুষ ইনসাফ না পেয়ে বাড়ি ফিরতেন না। তাই আপনার কাছে আমাদের দাবি ছিল যে কটা দিন আপনার বয়স রয়েছে সেই কটা দিন বিচারপতি হিসাবে এই রাজ্যের সাধারণ মানুষকে ন্যায় এবং ইনসাফ পাইয়ে দিয়ে যান।

Advertisement

কিন্তু কেন জানিনা হঠাৎই আপনি বিচারপতির পদ থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন। নেপথ্যে আর যাই হোক নিঃসন্দেহে কিছু একটা কারণ তো অবশ্যই রয়েছে। তবে তা আমাদের বিচার ব্যবস্থার পক্ষে সুখকর হবে না। আপনি হয়তো ভাবছেন রাজনীতির ময়দানে এসে সফলতা পাবেন। কিন্তু আপনি জানেন না এই রাজনীতির ময়দানে দাঁড়িয়ে আপনার মত উদার ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নিরপেক্ষ ইনসাফ প্রবণ মানুষের পক্ষে, এই রাজনীতির ময়দানে টিকে থাকাটা কতটা কঠিন হবে।

মাননীয় বিচারপতির কাছে আমাদের আবেদন, আপনি একজন ভারতীয় নাগরিক হিসাবে যেকোনো রাজনৈতিক দলের যোগ দিতেই পারেন কিন্তু আপনার আদর্শ আপনার নীতি সঙ্গে খাপ খাইয়ে যোগ দিলে তবেই হয়তো আপনি নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারবেন। আজ যারা আপনাকে নিয়ে হৈ হৈ করছে কাল যখন আপনি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির পদ ছেড়ে বেরিয়ে যাবেন তারাই আপনার পাশে থাকবেন না। এটা মনে রাখবেন। তাই রাজনীতির মঞ্চে যাওয়ার আগে অন্তত একবার হলেও ভাবুন যে কোন দলে কোন আদর্শের সঙ্গে আপনি নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারবেন।

এদেশের রাজনীতির সংকট হচ্ছে যে বহুত্ববাদের কথা আমরা বলি, যে সংস্কৃতির কথা আমরা বলি যে মানুষের সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে আমরা হাজির হই তা ভেঙে দেয়ার এক গভীর ষড়যন্ত্র বাংলা জুড়ে চলছে। এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে একা তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করে লাভ নেই লড়াই করতে হবে সব রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে। এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে যাচ্ছে বিচারপতি অশোক গাঙ্গুলীর কথা। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসাবে যেভাবে টুজি কেলেঙ্কারি কে সামনে এনেছিলেন এক কথায় অভিনবত্ব ছিল। এই বিচারপতি কংগ্রেসের অত্যন্ত কাছের মানুষ ছিলেন বলে জন মানষে প্রচারিত আছে কিন্তু বিচারপতির চেয়ারে বসে তিনি যেভাবে কেলেঙ্কারিকে সামনে এনেছিলেন নিরপেক্ষ বিচার করেছিলেন তা ইতিহাস হয়ে রয়েছে।

সুতরাং আপনি রাজনীতির মঞ্চের আসুন আমাদের কোন আপত্তি নেই তবে আবারো বলছি আপনার পক্ষে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির পদটি সম্মানিত পদ ছিল। আপনার আদর্শ আপনার নীতির সঙ্গে এই রাজ্যের বা এই দেশের খুব কম রাজনৈতিক দলের মিল হবে বলে আমাদের মনে হয়েছে। আপনি নিজেই বলুন না আপনি তো একসময় ডাব্লিউবিসিএস অফিসার ছিলেন তখন তো বামেদের রাজত্ব ছিল! কোন কারণে আপনি চাকরি ছেড়েছিলেন? সেটা আমাদের কাছে স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে!

আর সংবাদপত্রে দৌলতে আপনাকে যে দলে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে বা আপনার যে দলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে বলা হচ্ছে তাতে আমরা আশঙ্কিত। আপনাকে ব্যবহার করে আপনার জনপ্রিয়তাকে ব্যবহার করে এরা হয়তো নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা লুটবে আপনি ওই দলের কাছে অপমানিত হবেন। এই রাজ্যের মানুষও সুখে থাকবে না তখন আপনার আফসোস করার জায়গা থাকবে না! পরিশেষে বলি আপনাকে আমরা শ্রদ্ধা করি সম্মান করি। আপনি যেখানেই যান আপনার শিরদাঁড়াটা সোজা রেখে প্রশ্ন করতে শুরু করুন। আপনি যে রাজনৈতিক দলেই যোগ দেন আমাদের প্রত্যাশা আপনি মানুষের জন্য কাজ করবেন। আবারো বলছি রাজনীতি নয়, কলকাতা হাইকোর্টের ওই চেয়ারটাই আপনার উপযুক্ত জায়গা।


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ